20/04/2011 |
বুধবার, ২০ এপ্রিল ২০১১
ছিল না মেঘের গর্জন কিংবা বর্ষণ, বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাব
তপ্ত রোদে হালদায় রুই জাতীয় মাছ ডিম ছেড়েছে
পর্যাপ্ত ডিম মেলে নি, হতাশ সংগ্রহকারীরা
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে পূর্ণিমায় প্রবল বর্ষণ আর মেঘের গর্জনের কোন এক মুহূর্তে হালদা নদীতে রুই জাতীয় মাছ স্মরণাতীত কাল থেকে ডিম ছেড়ে আসলেও এবারেই প্রথম তার ব্যতিক্রম ঘটনা হয়েছে। গতকাল হালদায় স¤পূর্ণ ভিন্ন এক পরিবেশে মা মাছ ডিম ছেড়ে দেয়। অথচ এ সময় নদীতে কোন বর্ষণ কিংবা মেঘের গর্জন ছিলনা। তপ্ত রোদ ও উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু আগে থেকে প্রস্তুত না থাকায় ডিম সংগ্রহকারীদের অনেকে কাল পর্যাপ্ত ডিম পায়নি। প্রাথমিক অণুসন্ধানে দেখা যায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারে পানিতে লবণের মাত্রা বেশি থাকায় মা মাছ আগাম ডিম ছেড়ে দেয়। প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। এটি বিশ্বের একমাত্র জোয়ার-ভাটা নদী যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। স্মরণাতীকাল থেকে প্রতি বছর বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে হালদায় রুই জাতীয় মাছ (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) ডিম ছেড়ে আসছে। কিন্তু এবার তার ব্যত্যয় ঘটে। প্রবল বর্ষণ ও মেঘের গর্জন ছাড়াই মা মাছ সোমবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টায় হালদায় ডিম ছেড়ে দেয়। কিন্তু ভিন্ন পরিবেশে ডিম দেয়ায় আগে থেকে প্রস্তুত ছিলনা ডিম সংগ্রহকারীরা। এমনকি নদীতে মা মাছ ডিম দেয়ার ঘটনাটি তাদের কাছে অজানা থেকে যায় ছয় ঘন্টা। সকাল আনুমানিক ৮টায় রাউজানের উরকিরচর ইউনিয়নের মইশকরম গ্রামের জনৈক জেলে নদীতে ঠেলা জাল ফেললে কিছুক্ষণের মধ্যে তার জালে উঠে আসে রুই জাতীয় মাছের ডিম। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে জানাজানি হলে হালদার প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নৌকা, জাল ও অন্যান্য সরঞ্জাম নিয়ে শত শত ডিম সংগ্রহকারী নেমে পড়ে হালদায়। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার হালদায় প্রায় তিনশত নৌকা নিয়ে আনুমানিক এক হাজার ডিম সংগ্রহকারী ডিম ধরা কাজে ব্যস্ত ছিল। সর্তারঘাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রুই জাতীয় মাছ বিক্ষিপ্ত ভাবে ডিম ছাড়ে। বিশেষ করে রাউজানের অংকুরীঘোনা, হাটহাজারীর গড়দুয়ারা, নাপিতেরঘাট, পোড়াকপালী ¯¬“ইচ এলাকা, আমতোয়া, মধ্যম মাদার্শা, মদুনাঘাট, রাউজানের আজিমেরঘাট, কাগতিয়া, আবুরখীল, সিপাহীরঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় মা মাছ ডিম ছাড়ে। স¤পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে ডিম দেয়ার প্রসঙ্গে গড়দুয়ারা নয়াহাট এলাকার বাসিন্দা প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী আবুল বশর (৭১) জানান, তপ্ত রোদে রুই জাতীয় মাছ ডিম দেয়ার ঘটনাটি নজীরবিহীন। আমার জীবদ্দশায় আগে কখনো দেখিনি। খুব সম্ভবত নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারে পানিতে লবণের মাত্রা বেশি থাকায় মা মাছ আগাম ডিম ছেড়ে দেয়। ফলে ডিম সংগ্রহকারীরা কাঙ্খিত ডিম না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। এবছর আগাম ডিম দেয়ার কারণে এখানকার প্রতিটি নৌকা মাত্র ২-৫ কেজি করে ডিম পেয়েছে। তাই প্রতিটি নৌকার মালিক এবার আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হওয়া শংকা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ও হালদা বিশেষজ্ঞ মো: মনজুরুল কিবরীয়া জানান, হালদা ডিম সংগ্রহের নৌকার সংখ্যা প্রায় ৪০০, সংগৃহীত ডিমের পরিমাণ প্রায় ১৬০০ কেজি। সম্ভাব্য রেণুর পরিমাণ হবে ২৫-৩০ কেজি। রেণু বিক্রি বাবদ আয়ের পরিমাণ হবে প্রায় ২০-২২ লক্ষ টাকা (ক্ষতির পরিমাণ ৯৮%), আর যদি আঙ্গুলী পোনা করে তাহলে আয়ের পরিমাণ দাড়াবে প্রায় ৩ কোটি টাকা (ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭০%)। হালদার ডিম সংগ্রহ বাবদ এবছরের আর্থিক লগ্নির পরিমাণ প্রায় ১০ কোটি টাকা। মোট ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ৭ কোটি টাকার মত। যদিও বছর জুড়ে এ উৎপাদনের আর্থিক পরিমাণ দাড়াবে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
|