SUPPORTED BY

All Rights Reserved
Md. Manzoorul Kibria

 
facebook
twittter
 
HALDA COMMUNITY

অপার জীববৈচিত্র্য ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর হালদা নদী আমাদের ঐতিহ্য। হালদা নদী শুধু মৎস্য সম্পদের জন্য নয় এটি যোগাযোগ, কৃষি ও পানি সম্পদেরও একটি বড় উৎস। চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিদিন প্রায় ২০০ কোটি গ্যালন পানি উত্তোলন করে এ নদী থেকে। হালদা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ফটিকছড়ি, রাউজান ও হাটহাজারীসহ তিন উপজেলায় হালদা নির্ভর জনগোষ্টি। এদের জীবনযাত্রা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হালদা নদীর উপর নির্ভরশীল। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
(১) জেলে : মৎস্যখনি খ্যাত হালদা নদী দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র ছাড়াও একসময় চট্টগ্রামের মানুষদের স্বাদু পানির মাছ ও গলদা চিংড়ির অন্যতম উৎস্য ছিল। এখনও এঐতিহ্য কিছুটা হলেও অব্যাহত আছে। হালদার গলদা চিংড়ি পোনা দেশের চিংড়ি চাষের অন্যতম উৎস। এজন্য নদীর দুপাড়ে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি জেলে পাড়া। এখন এই জনগোষ্ঠির সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। হালদা নদীর মাছের উপর নির্ভর করে তারা জীবিকা নির্বাহ করে।
ছবি: হালদা পাড়ের জেলে সম্প্রদা

(২) ডিম সংগ্রহকারী : রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে নদীর দুই পাড়ে বেশ কিছু পরিবার বংশ পরম্পরায় বর্ষা মৌসুমে ডিম সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত থাকে। এই জনগোষ্ঠির সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার। হালদা নদী থেকে ডিম সংগ্রহ করে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মাধ্যমে নদীর পাড়ে মাটির গর্তে সংগৃহিত ডিম থেকে রেণু উৎপাদন করে। এই রেণু বিক্রিলব্ধ আয়ের মাধ্যমে সারা বছর তাদের সংসারের যাবতীয় খরচ নির্বাহ করে। হালদা নদীর রেণু বিক্রি হচ্ছে তাদের অন্যতম প্রধান আয়। রেণু পাপ্তির পরিমারে উপর নির্ভর করে বছরের বাকী সময়ের তাদের সংসারের সচ্ছলতা।

ছবি: হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী
(৩) মাঝি : একসময় ফটিকছড়ি, নাজিরহাট, হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহনের প্রধান ও সহজ মাধ্যম ছিল হালদা নদী। এখনও এই তিন উপজেলার বেশ কিছু এলাকার জনসাধারণের সহজ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ মাধ্যম হচ্ছে হালদা নদী। আর এজন্য এখানে গড়ে উঠেছে কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরী নৌকা। স্থানীয়ভাষায় এই বিশেষ ধরনের নৌকাকে বলে ”সাম্পান”।
এই ঐতিহ্যবাহী সাম্পানকে নিয়ে চট্টগ্রামে রচিত হয়েছে অনেক লোকগাতা ও পালা গান, যা এখনো সমগ্র বাংলাদেশে সমাদৃত। এই সাম্পান এখন চট্টগ্রামের নিজস্ব সাহিত্য ও শিল্প সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লগোটি ডিজাইন করা হয়েছে সাম্পনের আকৃতি থেকে। বর্তমানে সাম্পানের মধ্যে ইঞ্জিন সংযোজনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠির কিছু অংশ মানুষ ও পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এদেরকে স্থানীয়ভাবে মাঝি বলে। হালদা নদীর মাঝিদের গানকে বলে হালদা পাডা গান। এই হালদা পাডা গানও চট্টগ্রামের স্থানীয় সংস্কৃতির একটি গুরম্নত্বপূর্ণ অংশ। হালদা নির্ভর এই মাঝি সম্প্রদায় আমাদের ঐতিহ্য সাম্পান ও হালদা পাডা গানকে এখনো ঠিকিয়ে রেখেছে। হালদা নদীর উপর নির্ভর করে আবর্তিত হয় তাদের সারা বছরের আর্থসামাজিক অবস্থা।
ছবি: হালদা নদীর ঐতিহ্যবাহী সাম্পান ও মাঝি
 
 
Last Updated : April 22, 2011 4:14 PM & Copyright © 2010 [Md. Manzoorul Kibria]