SUPPORTED BY

All Rights Reserved
Md. Manzoorul Kibria


 
facebook
twittter
 
 
হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পুরুদ্ধার প্রকল্প

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি চট্টগ্রাম। পাহাড়, সাগর ও নদীবেষ্টিত এ চট্টগ্রাম আরও সমৃদ্ধ হয়েছে হালদা নদীর অনন্য বৈশিষ্ট্যের গুণে। হালদা নদী বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র। এটি পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী যেখান থেকে সরাসরি রুই জাতীয় মাছের নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। পৃথিবীর আর কোন জোয়ার-ভাটার নদী থেকে সরাসরি ডিম আহরণের নজির আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ কারণে হালদা নদী বাংলাদেশের জন্য এক বৈশ্বিক উত্তরাধিকারও বটে। অথচ দেশের নদী সম্পর্কিত জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দলিল কিংবা ইতিহাসে এ নদীর নাম অনেকটা অনুচ্চারিত। অপার জীববৈচিত্র্যময় ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এ নদী জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রেখে আসছে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে। রুই জাতীয় মাছের (রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালিবাউশ) পোনার জন্য এ নদীর আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকলেও সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, বাঁক কাটা, মা-মাছ নিধন, দূষণ, সরকারের উদসীনতা প্রভৃতি কারণে হালদা নদী এখন বিপর্যয়ের মুখে। প্রতি বছর মা-মাছের ডিম ছাড়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাচ্ছে। ১৯৪৫ সালে যেখানে ৪ হাজার কেজি রেণু উৎপাদিত হয়েছিল ২০০৮ সালে তা কমে প্রায় ৭০ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
 
পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার এবং প্রচারণার মাধ্যমে হালদা নদীর প্রজনন ক্ষেত্র আগের অবস্থায় ফিরিয়ে এনে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব। এ উপলব্ধি থেকে দেশের ঐতিহ্য হালদা নদীর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারের উদ্দেশে বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য অধিদপ্তর ২০০৭ সালের জুলাই থেকে “হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্প” নামে একটি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী (২০০৭-২০১২) এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষে হালদা নদী রুই জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক পোনার উৎপাদন বৃদ্ধিতে (লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার কেজি?) যথার্থ ভূমিকা রাখা এবং সংশ্লিষ্ট জনগণের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন করা এর প্রধান উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় হালদা পাড়ের জনগণের অংশগ্রহণ না থাকা, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতা, অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগসহ নানা কারণে ব্যাপক রহস্য ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া হালদা পাড়ের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী ও ব্যাপক আগ্রহ থাকার পরও কর্তৃপক্ষ প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের শুরু থেকেই তথ্য গোপন করে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এমনকি প্রণয়নের আগে সামাজিক ও পরিবেশগত কোন প্রভাব নিরুপণ ছাড়াই বাস্তবায়িত হচ্ছে এই বিতর্কিত প্রকল্পটি। এর প্রেক্ষিতে এই প্রকল্পের প্রকৃত অবস্থা নিরূপন এবং পর্যালোচনার জন্য এগিয়ে আসে আন্তর্জাতিক বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন একশনএইড বাংলাদেশ। তাদের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরীয়ার নেতৃত্বে একদল গবেষক মে থেকে ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত হালদার নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পের পরিবেশগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে মাঠ পর্যায়ে পর্যালোচনা কাজ সম্পন্ন করেন।
 
উক্ত পর্যালোচনার অংশ হিসাবে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহণের জন্য গত ১০ জানুয়ারী ২০০৯ শনিবার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে “হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্পের পর্যালোচনা” শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবি সমিতি (বেলা)-র পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ অংশ নেন। উক্ত পর্যালোচনা প্রতিবেদন ও সেমিনারে আলোচনার ভিত্তিতে ১৫টি সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয় এবং “হালদা নদীর প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার প্রকল্প : জনপ্রত্যাশা ও বাস্তবতা” শিরোনামে একটি প্রকাশনার ব্যবস্থা করা হয়।
 
আমাদের বিশ্বাস, এ প্রকাশনার মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং হালদা পাড়ের সাধারণ মানুষ হালদা নদী ও প্রকল্প সম্পর্কে ব্যাপক ও স্বচ্ছ ধারনা লাভ করবে । হালদা নদী রক্ষায় সামাজিক, রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি কিংবা বিবেকবোধ জাগ্রত করতেও এ প্রকাশনা সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আশা করি।
 
 
Last Updated : June 25, 2011 1:35 PM & Copyright © 2010 [Md. Manzoorul Kibria]